ভারতের জন্য “চিকেন নেক করিডোর” হলো প্রাণস্বরূপ এক সরু ভূখণ্ড – মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া এই করিডোরই ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে। বর্তমানে এই করিডোর চীনের ত্রিমুখী কৌশলগত চাপে পড়েছে—পূর্ব নেপাল, দক্ষিণ ভুটান ও উত্তর-পশ্চিম বাংলাদেশ থেকে সমন্বিতভাবে।
২০১৭ সালে ডোকলামে ৭৩ দিনের অচলাবস্থার পর চীন সেনা সরালেও ২৬৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় দাবি ছাড়েনি এবং ডোকলামের আশপাশে সামরিক নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। এই মালভূমি চিকেন নেক করিডোর থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে, যা ভারতের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি।
Read More – বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য ঘিরে উত্তেজনা, ফের ধাক্কা ঢাকাকে
নেপাল ফ্যাক্টর
পূর্ব নেপালের ঝাপা জেলায় চীন ১৪২২ হেক্টরজুড়ে “চীন-নেপাল মৈত্রী শিল্প পার্ক” গড়ে তুলতে চাইছে, যা শিলিগুড়ি করিডোর থেকে মাত্র ৫৫ কিলোমিটার দূরে। ভারত আশঙ্কা করছে, এই পার্ক নজরদারি ও লজিস্টিকস হাবে পরিণত হতে পারে, এমনকি সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ রুট হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে।
ভুটান ও গেলেফু প্রজেক্ট
ভুটানের ‘গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি’ প্রকল্প, যা ভারতীয় সীমান্তের কাছে তৈরি হচ্ছে, তাতে চীনের আগ্রহ বেড়েছে। যদিও ভারত এই প্রকল্পে অংশীদার, তবে চিনা বিনিয়োগকে ঘিরে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শঙ্কিত, কারণ এতে নিরাপত্তা ফাঁক তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশের লালমনিরহাট এয়ারবেস
চিকেন নেক থেকে মাত্র ২০ কিমি দূরের লালমনিরহাট এয়ারবেসে চীনা সহযোগিতায় উন্নয়নের পরিকল্পনা ভারতের কাছে গুরুতর নিরাপত্তা ইঙ্গিত বহন করে। এতে ভারতের সামরিক কার্যকলাপ নজরদারির ঝুঁকিতে পড়বে, বিশেষ করে উত্তরের রাজ্যগুলোর সঙ্গে সংযোগ দুর্বল হতে পারে।
এই তিন দিক থেকে আসা কৌশলগত চাপে—বিশেষজ্ঞরা একে বলছেন “ত্রিশূল নীতি”—ভারতকে এখন নজরদারি, সামরিক প্রস্তুতি ও কূটনৈতিক চাপ তিনগুণ বাড়াতে হবে। উত্তর-পূর্বের নিরাপত্তা রক্ষায় ভারতকে আরও সংগঠিত, সক্রিয় ও কৌশলী হতে হবে—এটাই আগামী বছরগুলোর মূল ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।