গলসি সরকারি যোজনা দক্ষিণবঙ্গ উত্তরবঙ্গ ক্রাইম আবহাওয়া কৃষি কাজ বিনোদন স্বাস্থ্য টেকআড্ডা কর্ম-খালি অটোমোবাইল মিউচুয়াল ফান্ড আধ্যাত্মিক অন্যান্য
---Advertisement---

কুম্ভ থেকে ফেরার পথে দুর্ঘটনার কবলে পুণ্যার্থীদের ট্রাভেলার গাড়ি।আহত চালকসহ ২৪ জন।

Published : February 27, 2025
---Advertisement---

১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধুলো-ধোঁয়াশায় মিশে গিয়েছিল যাত্রীদের আর্তনাদ। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের ২৭ পুণ্যার্থীকে নিয়ে ট্র্যাভেলার গাড়িটি কুম্ভ থেকে ফেরার পথে অযোধ্যা পার হয়ে চলছিল। স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় গাড়ির চালক হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারালেন। ডিভাইডারে ধাক্কা লেগে উল্টে যায় যান। ২৪ জন আহত, যাদের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে স্থানান্তর করা হয় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্তদের।

চালকের বিবৃতি নয়, প্রমাণ খুঁজছে পুলিশ

গলসী থানার এসআই প্রকাশ রায় জানান, “গাড়ির ব্রেকের সমস্যা ছিল কিনা, চালক গতিসীমা লঙ্ঘন করেছিলেন কি না—প্রযুক্তিগত পরীক্ষা ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি আমরা।” পশ্চিমবঙ্গ ট্রাফিক সুরক্ষা কমিটির ডেটা বলছে, ২০২৩ সালে রাজ্যে ডিভাইডার সংঘর্ষের ঘটনা ৪২% বেড়েছে, যার ৬৭% ঘটেছে দূরপাল্লার টুরিস্ট গাড়িতে।

কেন বারবার ঘটছে পুণ্যার্থী ট্র্যাভেলার দুর্ঘটনা?

ভারতীয় রাস্তায় অদৃশ্য শত্রু: ওভারলোডিং এবং ফ্যাটিগ

দিল্লির ট্রাফিক সেফটি এক্সপার্ট ডঃ অরুণাভ গুপ্তের মতে, “পিলগ্রিম ট্যুর অপারেটররা প্রায়ই গাড়িতে ১০-১৫% অতিরিক্ত যাত্রী তুলে দেন। ওভারলোডিংয়ের কারণে গাড়ির সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি শিফট হয়, যা হাইওয়েতে বাঁক নেওয়ার সময় বিপদ ডেকে আনে।” WHO-র ২০২২ রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে রোড অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যুর ৩৪% ঘটে ড্রাইভার ফ্যাটিগ বা অতিরিক্ত কাজের চাপে।

একটি ট্র্যাজেডির পিছনের গণিত

  • ১,২০০ কিমি: কুম্ভ (প্রয়াগরাজ) থেকে বসিরহাট পর্যন্ত দূরত্ব
  • ১৮ ঘণ্টা: অযোধ্যা হয়ে ফেরার সময় চালকের অনবরত ড্রাইভিং
  • ২৭ জন: ১৫-সিট ট্র্যাভেলারে যাত্রীর সংখ্যা (৮০% ওভারলোড)

রাস্তা বাঁচাতে স্থানীয়দের ভূমিকা: গলসী গ্রামের সাহসী তরুণরা

দুর্ঘটনার ১২ মিনিটের মধ্যে ২৫ জন স্থানীয় যুবক উদ্ধারকাজে যোগ দেন। ১৯ বছর বয়সী রাহুল মণ্ডল বলেন, “গাড়ির ছাদে পা আটকে গিয়েছিল এক বৃদ্ধার। আমরা লোহার রড দিয়ে ধাতব কাঠামো কাটি।” স্থানীয় হাসপাতালের ডাক্তার শ্রেয়া সেনগুপ্ত জানান, ৮ জনের শক সিনড্রোম ছিল, যাদের দ্রুত স্যালাইন দিতে হয়েছিল।

বর্ধমান মেডিকেলের ট্রমা কেয়ার: একটি রোল মডেল

রাজ্যের অন্যতম সেরা ট্রমা সেন্টারে পৌঁছানোর পর আহতদের চিকিৎসা শুরু হয়। হাসপাতালের সুপার ডঃ সুমন ঘোষ বলেন, “২ জনের ক্র্যানিয়াল ইনজুরি ছিল, কিন্তু এখন সবাই আউট অফ ডেঞ্জার।” ২০২১ সালে NHAI-র সমীক্ষা অনুসারে, NH-19-এ প্রতি ১০০ কিমিতে মাত্র ৩টি EMRI ১০৮ অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস আছে, যা জাতীয় গড়ের চেয়ে ৫০% কম।

রাজ্য সরকারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন মন্ত্রী জানিয়েছেন, NH-19-এর দুর্ঘটনাপ্রবণ ৮টি ‘ব্ল্যাক স্পট’ চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চের মধ্যে এসব এলাকায় সোলার স্ট্রিট লাইট, স্পিড ব্রেকার এবং AI-চালিত স্পিড ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা আছে। ## শেষ কথা: একটি দুর্ঘটনা শুধু পরিসংখ্যান নয়, মানবিক সংকট এই ঘটনা শুধু একটি সংবাদ নয়—এটি আমাদের যাত্রী সুরক্ষা, ট্রান্সপোর্ট নীতি এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার দর্পণ। যেমন বলেছিলেন মহাত্মা গান্ধী, “এক সমাজের মহত্ত্ব বিচার করা যায় তার দুর্বলদের প্রতি আচরণে।” পুণ্যার্থীদের নিরাপদ ফেরার অধিকার যেন পরের বার রাষ্ট্রীয় অগ্রাধিকার পায়।

Join WhatsApp

Join Now

Join Telegram

Join Now