পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ ব্লকের দুটি ছোট্ট গ্রাম—কৈশোর ও আলি গ্রাম, পরিচিত “টুপি গ্রাম” নামে। এই পরিচয়ের মূল কারণ এখানকার প্রায় প্রতিটি ঘরে চলে হাতে বোনা নামাজের টুপি তৈরির কাজ। সুদক্ষ হাতে গ্রামের মহিলারা তৈরি করেন এই সুদৃশ্য ও পরিশ্রমসাধ্য টুপিগুলি, যা শুধুমাত্র দেশের বাজারেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশ, মুম্বাই, ফুরফুরা শরীফ থেকে আরব দুনিয়াতেও।
প্রায় ৪০ বছর ধরে চলে আসছে এই হস্তশিল্প। রিলের সুতো আর ক্রুসের নিপুণ কারুকাজে তৈরি এই টুপিগুলি যেমন শিল্পসম্মত, তেমনই শ্রমসাধ্য। প্রতিটি টুপি তৈরি করতে সময় লাগে দীর্ঘক্ষণ, অথচ তার বিনিময়ে মেলে মাত্র ১০৫ টাকা, যা নির্ভর করে টুপির নকশা ও আকারের উপর। পরিশ্রম অনুযায়ী পারিশ্রমিক খুবই কম বলে আক্ষেপ করছেন এখানকার কারিগররা।
শিল্পীরা জানাচ্ছেন, বহুবার সরকারি সাহায্যের জন্য দরজায় কড়া নিলেও কোনো সাড়া মেলেনি। কোনো সরকারি প্রশিক্ষণ নেই, নেই আর্থিক অনুদান বা সহায়তার ব্যবস্থা। অথচ এই শিল্পে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এলে তা আরও প্রসারিত হতে পারত, বাড়তে পারত মজুরি, তৈরি হতে পারত নতুন কর্মসংস্থান। আজও এই টুপি শিল্প কৈশোর ও আলি গ্রামের মানুষের অন্যতম আয়ের উৎস। তবু সরকারি অনুদানের অভাবে ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যে শিল্পীরা তাদের যথাযথ প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা, যাতে তাঁদের কঠোর পরিশ্রমের যথাযোগ্য মূল্য মেলে।
এখন প্রশ্ন একটাই—আদৌ কি সরকার ও প্রশাসন তাঁদের দাবি মেনে নেবে? নাকি অবহেলার শিকার হয়েই হারিয়ে যাবে কৈশোর ও আলি গ্রামের ঐতিহ্যবাহী এই হস্তশিল্প