ভারতের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে রয়েছে এমন কিছু উৎসব, যা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়—একটি আত্মিক অভিজ্ঞতা। পুরীর শ্রীজগন্নাথের রথযাত্রা তারই এক অনন্য উদাহরণ। প্রতি বছর আষাঢ় মাসে লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার রথে আরোহন দেখতে ভিড় জমান পুরীধামে। যেন স্বয়ং ঈশ্বর নেমে আসেন ভক্তের দরজায়। শ্রীমন্দির থেকে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত এই শুভ যাত্রায় পুরী শহর ভরে ওঠে ভক্তির স্রোতে—আনন্দ, আস্থা আর আত্মার নির্ভরতায়।
Read more – জামালপুরের দেনার চাপে আত্মহত্যা করলেন কৃষক সত্যনারায়ণ ঘোষ। ৫ বছর ধরে চাষে লোকসান, পরিবারে শোকের ছায়া।
এই শ্রীজগন্নাথ মন্দির ঘিরে রয়েছে এক বিস্ময়কর রহস্য—যা যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানী ও ভক্ত, সকলকেই ভাবিয়ে তুলেছে।
মন্দিরের চূড়ার উপর দিয়ে কোনও পাখি উড়ে যায় না। না ড্রোন, না বিমান। যেন আকাশটুকুও ভগবানের সুরক্ষায় বন্দি।ভক্তদের মতে, বিষ্ণুর বাহন গরুড় দেব রক্ষা করেন মন্দিরের আকাশপথ। পাখিদের রাজা গরুড়ের এলাকায় আর কোনও পাখির সাহস হয় না ঢোকার। এটি এক অলৌকিক শক্তির প্রতীক, যা ঈশ্বরের উপস্থিতিকে অনুভব করায়।
অন্যদিকে, বিজ্ঞান বলছে—এই মন্দিরের উচ্চতা, স্থাপত্য ও উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান মিলে তৈরি করে এক জটিল বায়ুমণ্ডল। মন্দিরের চারপাশে বাতাসের এমন প্রবাহ সৃষ্টি হয়, যাকে বলা হয় “কারমান ভর্টেক্স স্ট্রিট”—যার ফলে পাখি বা ড্রোনের পক্ষে সেই অঞ্চলে স্থিতিশীলভাবে উড়ে থাকা প্রায় অসম্ভব।
আর মন্দিরের মাথার উপর থাকা ‘নীলচক্র’, যা ‘অষ্টধাতু’ দিয়ে তৈরি, সেটি নিয়েও রয়েছে নানা তত্ত্ব। অনেকেই মনে করেন, এটি আশেপাশের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গে প্রভাব ফেলে। যদিও এর কোনও নিশ্চিত প্রমাণ নেই, কিন্তু বিশ্বাসটা রয়েই গেছে। পুরীর উপকূলীয় বাতাস, সেই রহস্যময় নকশা আর আধ্যাত্মিক আবহ—সব মিলিয়ে শ্রীজগন্নাথ মন্দির যেন ঈশ্বর ও বিজ্ঞানের এক অভাবনীয় সংমিশ্রণ।